স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার শ্যামলীর বাসায় শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে (১১) নির্যাতনের ঘটনায় গৃহকর্তা জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডাঃ সিএইচ রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাস এবং তাদের সহযোগি বাসুদেব হালদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিতা শিশুর কাকা তপন বাড়ৈ বাদি হয়ে শনিবার দুপুরে শিশু নির্যাতন দমন আইনে জেলার উজিরপুর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে থানার ওসি জিয়াউল আহসান বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সূত্রমতে, শিশু নিপা বাড়ৈ উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী ননী বাড়ৈর কন্যা। তার মা দুইবছর আগে অন্যত্র বিয়ে করে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা দ্বিতীয়। অভাবের সংসারে গত ছয় মাস পূর্বে ডাঃ সিএইচ রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে নিপা। ওই বাসায় কাজে যাওয়ার পর থেকে ডাঃ রবিনের স্ত্রী রাখি দাস তাকে নির্যাতন করে আসছে। অমানুষিক নির্যাতনে সে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পরলে বুধবার চিকিৎসকের চেম্বারের সহকারী বাসুদেবের মাধ্যমে নিপাকে তার গ্রামের বাড়ির পাশে ফেলে রেখে ওই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ওইদিন গভীর রাতে থানা পুলিশ উত্তর জামবাড়ি এলাকা থেকে শিশু নিপাকে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। শনিবার সকালে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা তাওহিদ জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিপার কাকা পরিচয়ে এক ব্যক্তি নিপাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় পুলিশকে না জানিয়ে নিপাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে ইউপি সদস্য নরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেও কোন সুফল পায়নি। রহস্যজনকভাবে শুক্রবার ভোর থেকে চিকিৎসাধীন শিশু নিপা হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যায়। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে উজিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন ডাঃ শামসুদ্দোহা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার একপর্যায়ে হারতা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নরেন্দ্র নাথ বাড়ৈর মধ্যস্থতায় চিকিৎসক দম্পত্তি নির্যাতনের ঘটনাটি ধাঁমাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ওই ইউপি সদস্যর মাধ্যমে শিশু নিপার স্বজনদের অর্থের প্রলোভন দেখানো হয়। ওই লোভে পরে স্বজনরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুত্বর অসুস্থ শিশু নিপাকে নিয়ে আত্মগোপন করেছিলো। উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই শিশুর কাকা পরিচয় দেয়া তপনের আত্মীয় আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামের বিমলের বাড়ি থেকে শনিবার ভোররাতে আহত নিপা বাড়ৈকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশু নিপাকে সকালে চিকিৎসার জন্য আবারও উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শওকত আলী জানান, শিশুটিকে ভর্তির পর থেকেই নানান মহল থেকে নিয়ে যাবার জন্য লোকজন আসে। সর্বশেষ একজন ইউপি সদস্যর নেতৃত্বে কিছু লোকজন শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসে। পরে শুক্রবার ভোরে শিশুটি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন জানান, নির্যাতিতা শিশুর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পুরো ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণতি বিশ্বাস জানান, শিশুটির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা করা হবে। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) জেলা সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু অসাধুলোক শিশুটিকে নিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে। শিশুটি তার উপর নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোরদাবি করেন। উল্লেখ্য, ডাঃ সিএইচ রবিনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করা শিশু নিপা বাড়ৈকে কারণে অকারণে দীর্ঘদিন থেকে অমানুষিক নির্যাতন করে আসছিলো চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাস। নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মীকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই চিকিৎসকের নিজস্ব চেম্বারের সহকারী বাসুদেব হালদারের মাধ্যমে ঢাকা থেকে গুরুত্বর অবস্থায় এনে গ্রামের বাড়ির পাশে ফেলে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ শিশুটিকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শিশুটির শরীরের বিভিন্নস্থানে ক্ষত হয়ে রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্যাতিতা শিশুর শরীরের নতুন ও পুরাতন ক্ষতের চিকিৎসা করছেন।
Leave a Reply